বছর-কয়েক আগের কথা। তখন দিল্লিতে। কম্যুনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া, সিপিআই-এর সদর দপ্তর ‘অজয় ভবন’-এ গিয়েছি কম্যুনিস্ট পার্টি-র পুরনো পোস্টারের সংগ্রহ আছে কি না জানতে। লাইব্রেরিতে একজনই ছিলেন। পোস্টার নিয়ে কোনরকম উৎসাহ না দেখিয়েই জানিয়ে দিলেন, কিছু নেই। একটু মনমরা হয়ে এদিক-ওদিক ঘুরছি। দেখলাম একটা আলমারির মাথায় একদলা কাগজ গোল করে মুড়ে রাখা। পেড়ে দিতে বলাতে, অনুরোধ করাতে, গররাজি হলেও, দিলেন।
একটা টেবিলের ওপরে খুলতে দেখলাম চিত্তপ্রসাদের আঁকা। চমকে উঠলাম। অযত্নে ছিঁড়ে গেছে। কোনরকমে হাত দিয়ে চেপে ছেঁড়া কাগজের টুকরোগুলো সাজিয়ে যে কাপড়ের ওপর আঠা দিয়ে লাগানো ছিল, মেলে ধরলাম। ছবি তুললাম, যতটা পারা যায়। ১৯৪২ সালে চট্টগ্রামে আঁকা চিত্তপ্রসাদের ছবি। একটি পোস্টার ছবি, একটি পোস্টার কার্টুন।
চট্টগ্রামে চিত্তপ্রসাদ ১৯২৮ থেকে। স্কুল, কলেজ, কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য হওয়া, ছবি আঁকা। ১৯৪২-এ চট্টগ্রামে জাপানি বিমানের বোমা আক্রমণ। হিন্দু-মুসলমান মানুষজনকে ঐক্যবদ্ধ করে জাপানি আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রস্তুত করতে কম্যুনিস্ট পার্টির উদ্যোগ। ছবি, পোস্টার, দেওয়াল পত্রিকা, সভা, নাটক, গান, এ সবে গভীর ভাবে জড়িয়ে চিত্তপ্রসাদ। জাপানি বোমার বিধ্বংসী চেহারা, প্রতিরোধের জন্য একতা, এমন সব বিষয়ে ছবি, কার্টুন এঁকেছেন চিত্তপ্রসাদ। ছবিগুলি নিয়ে কম্যুনিস্ট পার্টির কর্মীরা গ্রামের বাজারে-বাজারে প্রদর্শনী করতেন, পিছনে শক্ত কিছু জুড়ে টাঙিয়ে দেওয়া হত। যেতে যেতে মানুষজন দাঁড়িয়ে দেখতেন। এমন সব জানা যায় সেই সময়ে চট্টগ্রামে যাঁরা ছিলেন, চিত্তপ্রসাদকে নিয়ে তাঁদের লেখায়। কার্টুনটি পড়ে ছাপা হয় People’s War পত্রিকায় ২ মে, ১৯৪৩। ছবিটির নিচে ছাপা ছিল A poster by Comrade Chittaprasad. চিত্র-পরিচিতিতে লেখা ছিল, The Jap Octopus having gripped Korea, Manchuria, Malaya and Burma stretching out. The Indian people kept tied by the bureaucracy. The Muslim patriot dreaming of Pakistan. The Chinese warrior battling singlehanded.
জাপানি আক্রমণে নিহত মা ও সন্তানের মৃত্যু নিয়ে আঁকা ছবিতি চিত্তপ্রসাদ বিষয়ে প্রকাশিত বইগুলিতে দেখা যায়নি।